মিয়ানমারে দীর্ঘ দিন ধরেই জান্তাবিরোধী গৃহযুদ্ধ চলছে। এবার সেই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছে একটি মুসলিম সামরিক ইউনিট। মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলের তানিনথারিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এই ইউনিটের নাম ‘মুসলিম কোম্পানি’।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন জাতীয় জোটে (কেএনইউ) খ্রিস্টান ও বৌদ্ধের সংখ্যাই বেশি। ওই বিদ্রোহী দলে এতদিন কোনো মুসলিম ছিল না। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিল মুসলিম কোম্পানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম কোম্পানির ইউনিটকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেএনইউয়ের চতুর্থ ব্রিগেডের তৃতীয় ইউনিট দেওয়া হয়েছে। এই ইউনিটের সেনাদের ইউনিফর্মে একটি চাঁদ–তারা সম্বলিত ব্যাজ থাকবে। এ ধরনের ব্যাজ অল বার্মা মুসলিম লিবারেশন আর্মির (এবিএমএলএ) সেনাদের থাকে।
মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিসত্তার মুসলমান বাস করে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাস করে দেশটির পশ্চিমে। এ ছাড়া ভারতীয় ও চীনা বংশোদ্ভূত মুসলমান ছড়িয়ে রয়েছে সারা মিয়ানমারে। ‘কামেইন’ নামে আরেকটি মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে, যাদের পূর্বপুরুষরা ১৭ শতকে আরাকানে আশ্রয় নেওয়া এক মুঘল রাজপুত্রের তীরন্দাজ বাহিনীর অংশ ছিল বলে ধারণা করা হয়।
মিয়ানমারে বসবাসরত প্রায় সকল জাতিসত্তার মুসলিমরাই জান্তা সকারের নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার। রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নিপীড়ন তো আছেই, এর বাইরে কয়েকটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর নাগরিরকত্বও কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। জান্তা সরকার ও কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দাবি, মিয়ানমারের দেশীয় বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য মুসলমানরা হুমকিস্বরূপ।
মিয়ানমারের বিশ্লেষক অ্যাশলি সাউথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘মিয়ানমারের মুসলমানরা বহুদিন ধরেই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার। তবে কারেন অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনকে শান্তিতে বসবাস করতে দেখা যাচ্ছে। যে কারণে মুসলিম শরণার্থীদের একটি বড় অংশ কারেন-অধ্যুষিত অঞ্চলে আশ্রয় নিচ্ছে।’
মুসলিম কোম্পানির নেতা মোহাম্মদ আইশার আল জাজিরাকে বলেন, ‘যতদিন সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এ দেশের মুসলিম ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী নিপীড়িত হতে থাকবে। তাই জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।’
সূত্র ইডিপেন্ডেন্ট টিভি
পাঠকের মতামত